হেপাটাইটিস: একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা
ভূমিকা:
হেপাটাইটিস হলো লিভারের একটি প্রদাহজনিত রোগ, যা ভাইরাসজনিত, অ্যালকোহলজনিত, ওষুধজনিত কিংবা অটোইমিউন কারণে হয়ে থাকে। এটি লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ব্যাহত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে লিভার সিরোসিস বা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
---
হেপাটাইটিস এর কারণসমূহ:
হেপাটাইটিসের মূল কারণগুলো নিম্নরূপ:
1. ভাইরাস:
হেপাটাইটিস A, B, C, D ও E ভাইরাস।
2. অ্যালকোহল সেবন:
অতিরিক্ত অ্যালকোহল লিভারের কোষ নষ্ট করে।
3. ওষুধ ও রাসায়নিক পদার্থ:
প্যারাসিটামল বা নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকের অধিক গ্রহণ।
4. অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া:
শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেই লিভার কোষ আক্রমণ করে।
5. বিষাক্ত ছত্রাক বা খাদ্যদ্রব্য।
---
হেপাটাইটিসের প্রকারভেদ:
1. হেপাটাইটিস A:
খাদ্য বা পানির মাধ্যমে ছড়ায়।
সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ও কম গুরুতর।
2. হেপাটাইটিস B:
রক্ত, যৌন সম্পর্ক বা মায়ের দুধের মাধ্যমে সংক্রমণ।
দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল হতে পারে।
3. হেপাটাইটিস C:
মূলত সংক্রমিত রক্ত বা সূচের মাধ্যমে ছড়ায়।
প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদী ও লিভার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
4. হেপাটাইটিস D:
কেবলমাত্র হেপাটাইটিস B আক্রান্তদের মধ্যে হয়।
মারাত্মক ধরনের সংক্রমণ।
5. হেপাটাইটিস E:
দূষিত পানি ও খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ছড়ায়।
গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
---
লক্ষণসমূহ:
জ্বর
দুর্বলতা ও অবসাদ
চোখ ও চামড়া হলুদ হওয়া (জন্ডিস)
বমি ও বমি বমি ভাব
পেটের ডান পাশে ব্যথা
অরুচি
গা ব্যথা ও মাথাব্যথা
গা চুলকানো
---
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি:
1. রক্ত পরীক্ষা:
ALT, AST, বিলিরুবিন, হেপাটাইটিস ভাইরাসের অ্যান্টিজেন/অ্যান্টিবডি নির্ধারণ।
2. ইমেজিং টেস্ট:
আলট্রাসনোগ্রাম, CT স্ক্যান।
3. লিভার বায়োপসি:
কোষের ক্ষতি কতটা হয়েছে তা নির্ধারণে সহায়ক।
4. PCR টেস্ট (বিশেষ করে HCV এর জন্য):
ভাইরাসের জেনেটিক মেটেরিয়াল শনাক্তকরণ।
---
চিকিৎসা পদ্ধতি:
1. হেপাটাইটিস A ও E:
সাধারণত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার ও হাইড্রেশনই যথেষ্ট।
কিছুদিন পর সেরে যায়।
2. হেপাটাইটিস B:
দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
ভ্যাকসিন উপলব্ধ ও প্রতিরোধযোগ্য।
3. হেপাটাইটিস C:
আধুনিক এন্টিভাইরাল ওষুধের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
4. হেপাটাইটিস D:
চিকিৎসা কঠিন।
5. সহায়ক চিকিৎসা:
পর্যাপ্ত বিশ্রাম
যকৃত-বান্ধব খাদ্য
অ্যালকোহল পরিহার
যকৃতের কার্যক্ষমতা পর্যবেক্ষণ
---
প্রতিরোধ ব্যবস্থা:
হেপাটাইটিস A ও B এর ভ্যাকসিন গ্রহণ।
বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ।
যৌন সম্পর্কের সময় সুরক্ষা।
ব্যবহৃত সুচ ও রক্তের সতর্কতা।
হাইজিন বজায় রাখা।
---
উপসংহার:
হেপাটাইটিস একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও সচেতনতা, সঠিক প্রতিরোধ এবং আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময় সম্ভব। জনসচেতনতা ও ভ্যাকসিন গ্রহণের মাধ্যমে সমাজকে হেপাটাইটিস মুক্ত রাখা সম্ভব।
ডাঃ মোঃ লিটন মিয়া
বিএইচএমএস (ঢাবি)
এমএস (পি এ ইউ).